Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

নিয়তের গুরুত্ব ও তাৎপর্য: হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা



নিয়াত এর গুরুত্তো ও ভয়র্জো



নিয়তের গুরুত্ব ও তাৎপর্য: হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ


ইসলামে প্রতিটি কাজ বা আমলের গ্রহণযোগ্যতার মূল ভিত্তি হলো নিয়ত। নিয়ত শব্দের অর্থ হলো— ইচ্ছা, সংকল্প বা উদ্দেশ্য। আপনি কী কাজ করছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কাজটি কী উদ্দেশ্যে করছেন। একটি বিশুদ্ধ ও সৎ নিয়ত সাধারণ কাজকেও ইবাদতে রূপান্তরিত করতে পারে, আবার একটি অশুদ্ধ বা লোক দেখানো নিয়ত শ্রেষ্ঠ ইবাদতকেও মূল্যহীন করে দিতে পারে।

এই ব্লগে আমরা নিয়তের গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পর্কিত হাদিসটি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ বিস্তারিত জানব, ইনশাআল্লাহ।                                 
নিয়ত কী?

'নিয়ত' একটি আরবি শব্দ, যার আধানিক অর্থ —ইচ্ছা, অভিপ্রায়, মনের সংকল্প বা উদ্দেশ্য। ইসলামি পরিভাষায়, সতর্ক সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করার জন্য মনের স্থির সংকল্পকে বলা হয়। এটি তার অন্তরের কাজ, যা মুখের উচ্চতার উপর নয়।

নিয়তের ফজিলত
বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে একজন মুমিন অশেষ সওয়াব ও ফজিলত লাভ করতে পারে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো:
  • সাধারণ কাজ ইবাদতে পরিণত হয়: শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হলে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলোও (যেমন: খাওয়া, ঘুমানো, পরিবারের জন্য উপার্জন করা) ইবাদতে পরিণত হয়।
  • আমল না করেও সওয়াব লাভ: যদি কোনো ব্যক্তি সৎ ও ভালো কোনো কাজ করার জন্য মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করে, কিন্তু কোনো কারণে তা করতে না পারে, তবুও সে তার বিশুদ্ধ নিয়তের জন্য সওয়াব লাভ করবে।
  • অল্প আমলে অধিক প্রতিদান: ইখলাস বা একনিষ্ঠতার সাথে সামান্য আমলও আল্লাহর কাছে অনেক বড় প্রতিদান বয়ে আনতে পারে। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করা বড় আমলের চেয়ে এটি বহুগুণে উত্তম
  • আল্লাহর সাহায্য লাভ: যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত করে, আল্লাহ তাআলা সে কাজে তাকে সাহায্য করেন এবং তার জন্য বিষয়টি সহজ করে দেন।
নিয়ত সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
ইসলামের সুবিশাল জ্ঞানভান্ডারে নিয়তের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য যে হাদিসটিকে স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেটি হলো:
আরবি হাদিস:
عَنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَبِي حَفْصٍ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: "إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ". (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
বাংলা উচ্চারণ: "আন আমীরিল মু'মিনীন আবি হাফসিন 'উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃ) ক্বালা: সামি'তু রাসূলাল্লাহি (ﷺ) ইয়াক্বূলু: 'ইন্নামাল আ'মালু বিননিয়্যাত, ওয়া ইন্نامা লিকুল্লিমরিইম-মা নাওয়া। ফামান কানাত হিজরাতুহু ইলাল্লাহি ওয়া রাসূলিহি, ফাহিজরাতুহু ইলাল্লাহি ওয়া রাসূলিহি। ওয়া মান কানাত হিজরাতুহু লিদুনইয়া ইউসীবুহা, আওয়িমরাআতিন ইয়ানকিহুহা, ফাহিজরাতুহু ইলা মা হাজারা ইলাইহি'।"
বাংলা অর্থ: আমিরুল মুমিনিন আবু হাফস উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: “নিশ্চয়ই সকল আমল (কাজ) নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। সুতরাং, যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই গণ্য হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়াবী কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার জন্য, তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে, যেজন্য সে হিজরত করেছে।
হাদিসের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য
এই হাদিসটি ইসলামের অন্যতম একটি মৌলিক নীতি। ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মতো বিখ্যাত আলেমগণ বলেছেন, এই হাদিসটি ইসলামের এক-তৃতীয়াংশ জ্ঞানের সমান। আসুন এর প্রতিটি অংশ বিস্তারিতভাবে বোঝার চেষ্টা করি।
১. "সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল"
এর অর্থ হলো, যেকোনো কাজের বাহ্যিক রূপ দিয়ে তার বিচার করা হবে না, বরং বিচার করা হবে তার পেছনের উদ্দেশ্য বা নিয়ত দিয়ে। উদাহরণস্বরূপ:
  • নামাজ: একজন ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছে, যেন মানুষ তাকে ধার্মিক বলে। আরেকজন ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড়ছে। বাইরে থেকে দুজনের কাজ এক হলেও, আল্লাহর কাছে দ্বিতীয় ব্যক্তির নামাজই কবুল হবে, প্রথমজনের নয়।
  • দান: একজন ব্যক্তি খ্যাতি বা সুনাম অর্জনের জন্য লক্ষ টাকা দান করল। আরেকজন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গোপনে ১০ টাকা দান করল। আল্লাহর কাছে এই ১০ টাকার দানের মূল্য অনেক বেশি, কারণ তার নিয়ত ছিল বিশুদ্ধ।
২. "প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে"

এই অংশটি পূর্বের কথাটিকেই আরও স্পষ্ট করে। মানুষ ঠিক যা নিয়ত করবে, সে ঠিক সেই ফলাফলই পাবে—দুনিয়া এবং আখিরাতে।

  • যদি কেউ জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, দ্বীনের সেবা করার জন্য, তবে সে এর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত হবে।

  • কিন্তু যদি কেউ জ্ঞান অর্জন করে অহংকার করার জন্য, মানুষের সাথে তর্ক করে জেতার জন্য বা দুনিয়াবী কোনো পদের জন্য, তবে সে হয়তো দুনিয়াতে তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে, কিন্তু আখিরাতে এর কোনো প্রতিদান পাবে না।

৩. হিজরতের উদাহরণ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিয়তের বিষয়টি বোঝানোর জন্য হিজরতের মতো একটি শ্রেষ্ঠ আমলের উদাহরণ দিয়েছেন। হিজরত হলো আল্লাহর জন্য নিজের ঘর-বাড়ি, আত্মীয়-স্বজন ও সম্পদ ত্যাগ করা। এটি একটি বিশাল ইবাদত।

  • প্রথম ক্ষেত্র: যে ব্যক্তি মক্কার কাফিরদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এবং দ্বীন নিয়ে স্বাধীনভাবে চলার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মদিনায় হিজরত করেছেন, তার এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে। তিনি এর জন্য মহাপুরস্কার পাবেন।

  • দ্বিতীয় ক্ষেত্র: যদি কেউ হিজরত করে কিন্তু তার উদ্দেশ্য থাকে মদিনায় গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে লাভবান হওয়া অথবা সেখানে কোনো নির্দিষ্ট নারীকে বিয়ে করা, তবে তার এই হিজরত আল্লাহর জন্য গণ্য হবে না। সে তার কাজের জন্য কোনো সওয়াব পাবে না। সে যা উদ্দেশ্য করেছিল (ব্যবসা বা বিয়ে), সেটাই তার প্রাপ্তি হিসেবে গণ্য হবে।

দৈনন্দিন জীবনে নিয়তের প্রয়োগ

বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিদিনের সাধারণ কাজকেও ইবাদতে পরিণত করতে পারি।

  • খাওয়া: আপনি যদি এই নিয়ত করে খান যে, "এই খাবার আমাকে শক্তি দেবে এবং সেই শক্তি দিয়ে আমি আল্লাহর ইবাদত করব", তবে আপনার এই খাওয়াটাও ইবাদত হয়ে যাবে 
  • ঘুম: যদি এই নিয়ত করে ঘুমান যে, "আমি বিশ্রাম নিচ্ছি যেন সতেজ হয়ে আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারি", তবে আপনার ঘুমও সওয়াবের কারণ হবে।  
  • উপার্জন: যদি একজন ব্যক্তি এই নিয়তে হালাল পথে উপার্জন করে যে, "আমি আমার পরিবারের ভরণপোষণ করব, যা আমার উপর একটি দায়িত্ব এবং আল্লাহর নির্দেশ", তবে তার এই উপার্জনও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে আরও বিস্তারিত আলোচনা
পূর্বের আলোচনায় আমরা নিয়তের প্রাথমিক গুরুত্ব এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সম্পর্কে জেনেছি। এই অংশে আমরা কুরআন ও আরও কিছু হাদিসের আলোকে নিয়তের গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং বিভিন্ন দিক নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে পাঠকরা বিষয়টি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন।


কুরআনের আলোকে নিয়তের গুরুত্ব

কুরআন মাজিদে সরাসরি নিয়তের কথা উল্লেখ না থাকলেও, বিভিন্ন আয়াতে ইখলাস (একনিষ্ঠতা)সৎ উদ্দেশ্যের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা মূলত বিশুদ্ধ নিয়তেরই বহিঃপ্রকাশ।
১. সূরা আল-বাইয়্যিনাহ (৯৮): ৫

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
বাংলা উচ্চারণ: "ওয়া মা উমিরূ ইল্লা লিইয়াবুদুল্লাহা মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা হুনাফাআ ওয়া ইয়ুকীমুস সালাতা ওয়া ইয়ু'তুয্ যাকা-তা ওয়া যা-লিকা দীনুল ক্বাইয়িমা।"
বাংলা অর্থ: "তাদেরকে এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, এমতাবস্থায় যে তারা একমাত্র তাঁরই অনুগত এবং তারা সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দেবে। এটাই সঠিক দ্বীন।"
এই আয়াতে 'মুখলিসীন' শব্দের অর্থ হলো একনিষ্ঠ, খাঁটি। আল্লাহর ইবাদত একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য করাই হলো ইখলাস, যা বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া সম্ভব নয়।
২. সূরা আল-আনআম (৬): ১৬২
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা উচ্চারণ: "ক্বুল ইন্না সালা-তী ওয়া নুসূকী ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রব্বিল 'আ-লামীন।"
বাংলা অর্থ: "বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।"
এই আয়াতে মুমিনের জীবনের প্রতিটি কর্ম আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার কথা বলা হয়েছে। আর এই উৎসর্গের ভিত্তি হলো বিশুদ্ধ নিয়ত।

আরও কিছু হাদিসের আলোকে নিয়তের গুরুত্ব

প্রথম হাদিসটি ছাড়াও, নিয়তের গুরুত্ব বোঝাতে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
১. নিয়ত মুমিনের শ্রেষ্ঠত্ব দান করে
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «المُؤْمِنُ عَلَى نِيَّتِهِ، إِنْ أَحْسَنَ نِيَّتَهُ أَحْسَنَ اللَّهُ لَهُ عَمَلَهُ» (আল-মু'জাম আল-আওসাত লিত Tabarani)
বাংলা উচ্চারণ: "আন সাহলিবনি সা'দিস সা'ঈদী (রাঃ) ক্বালা: ক্বালান্নাবিয়্যু (ﷺ): 'আল-মু'মিনু আলা নিয়্যাতিহি, ইন আহসানা নিয়্যাতাহু আহসানাল্লাহু লাহু 'আমালাহু।"
বাংলা অর্থ: সাহল ইবনে সা'দ আস-সা'ঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন: "মুমিন তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যদি সে তার নিয়তকে সুন্দর করে, তবে আল্লাহ তার কাজকে সুন্দর করে দেন।"
এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, একজন মুমিনের মর্যাদা ও কাজের প্রতিদান তার নিয়তের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভরশীল। সুন্দর নিয়ত কাজের ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর অনুগ্রহ আকর্ষণ করতে পারে।
২. ভালো নিয়তের কারণে গুনাহ মাফ হতে পারে
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ اللَّهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ» (সহিহ মুসলিম)
বাংলা উচ্চারণ: "আন আনাসিন (রাঃ) ক্বালা: ক্বালা রাসূলুল্লাহি (ﷺ): 'মান সাআলাল্লাহাশ শাহাদাতা বিছিক্বিন বাল্লাগাহুল্লাহু মানাযিলাশ শুহাদা-ই ওয়া ইন মাতা 'আলা ফিরাশিহি।"
বাংলা অর্থ: আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: "যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সত্য অন্তরের সাথে শাহাদাত কামনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন, যদিও সে তার বিছানায় মারা যায়।"
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যদি কারো ভালো নিয়ত থাকে এবং সে কোনো সৎ কাজের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রাখে, কিন্তু কোনো কারণে কাজটি করতে না পারে, তবুও আল্লাহ তার বিশুদ্ধ নিয়তের জন্য তাকে সেই কাজের সমতুল্য প্রতিদান দান করেন।
৩. নিয়তের ভিন্নতার কারণে একই কাজের ভিন্ন প্রতিদান
প্রথম হাদিসের শেষ অংশে হিজরতের উদাহরণ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বুঝিয়েছেন যে, একই ধরনের কাজ বিভিন্ন নিয়তের কারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিদান নিয়ে আসতে পারে।

  • একজন ব্যক্তি হয়তো জ্ঞান অর্জন করছেন মানুষের উপকার করার জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।  
  • আরেকজন হয়তো জ্ঞান অর্জন করছেন শুধু পন্ডিত হিসেবে খ্যাতি লাভের জন্য।

বাহ্যিকভাবে দুজনের কাজটি একই রকম হলেও, তাদের নিয়তের ভিন্নতার কারণে আল্লাহর কাছে তাদের প্রতিদান ভিন্ন হবে। প্রথম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন, কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি হয়তো শুধু দুনিয়াতে খ্যাতি লাভ করবেন, আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না।
৪. খারাপ নিয়ত কাজের মন্দ ফল ডেকে আনে
যেমন বিশুদ্ধ নিয়ত ভালো কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করে, তেমনি খারাপ নিয়ত ভালো কাজকেও নষ্ট করে দিতে পারে এবং মন্দ ফল ডেকে আনতে পারে।
  • যদি কেউ দান করে শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য, তবে তার এই দান আল্লাহর কাছে কোনো মূল্য পাবে না। বরং, লোক দেখানোর নিয়ত থাকার কারণে সে তিরস্কৃত হতে পারে।
  • যদি কেউ সালাত আদায় করে মানুষকে দেখানোর জন্য, তবে তার সালাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

নিয়তের গুরুত্বের কয়েকটি দিক
  • আমলের মানদণ্ড: নিয়ত হলো আমলের মানদণ্ড। এটি নির্ধারণ করে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে কিনা।
  • ইবাদতের প্রাণ: নিয়তবিহীন ইবাদত একটি প্রাণহীন দেহের মতো। এতে কোনো রুহ বা আত্মা নেই।
  • সাধারণ কাজ ইবাদতে রূপান্তর: বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে একজন মুমিন তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতিটি কাজকে ইবাদতে পরিণত করতে পারে।
  • অদৃশ্য শক্তি: নিয়ত হলো অন্তরের একটি অদৃশ্য শক্তি, যা মানুষকে সৎ পথে চলতে এবং ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। 
  • আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম: বিশুদ্ধ নিয়ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
নিয়ত করার সঠিক পদ্ধতি
নিয়ত মূলত অন্তরের সংকল্প। এর জন্য মুখে কোনো নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তবে, কোনো কাজ করার পূর্বে মনে মনে সেই কাজের উদ্দেশ্য স্থির করাই হলো নিয়ত। উদাহরণস্বরূপ:
  • সালাতের নিয়ত: মনে মনে স্থির করা যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ওয়াক্তের সালাত আদায় করছি।
  • দানের নিয়ত: মনে মনে স্থির করা যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই অর্থ দান করছি।

  • রোজা রাখার নিয়ত: মনে মনে স্থির করা যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রোজা রাখব।

তবে, যদি কেউ মুখে নিয়ত উচ্চারণ করে, তবে তাতে কোনো ক্ষতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তরের সংকল্প ঠিক থাকে। মূল বিষয় হলো অন্তরের আন্তরিকতা ও আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা।
উপসংহার

নিয়ত হলো ইসলামের প্রাণ। এটি এমন এক অদৃশ্য শক্তি যা আমাদের প্রতিটি কাজকে মূল্যবান করে তোলে। তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজে নিয়তকে বিশুদ্ধ করা অপরিহার্য। আমাদের উচিত, যেকোনো কাজ শুরু করার আগে নিজের অন্তরকে প্রশ্ন করা—এই কাজটি আমি কার জন্য করছি? আমার উদ্দেশ্য কি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, নাকি অন্য কিছু?

যখন আমাদের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তখনই আমাদের জীবন অর্থবহ হবে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা সফলকাম হতে পারব।

শেষ কথা

নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, ছোট বা বড় যেকোনো কাজ করার আগে আমাদের উচিতনিজের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য রাখা। কারণ, আল্লাহর কাছে আমাদের বাহ্যিকআমলের চেয়ে আমাদের অন্তরের নিয়ত এবং উদ্দেশ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি।

 



    

    




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ